একটু খানি বিজ্ঞান pdf download | Ektu Khani Biggan pdf download
একটু খানি বিজ্ঞান pdf বই free download | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক pdf বই - লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল, পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৭৫ টি। - pdf size: 13mb.
একটু খানি বিজ্ঞান বই রিভিউঃ
মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’এ প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধগুলো একত্র করে “একটুখানি বিজ্ঞান” নামে একটি বই প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালের বইমেলায়। বইটি বিপুল সফলতা অর্জন করে এবং সমালোচক কর্তৃক প্রশংসিত হয়। তিন বছর পর আবারো সেই পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো নিয়ে আরো একটি গ্রন্থ প্রকাশ করে কাকলী প্রকাশনী, “আরো একটুখানি বিজ্ঞান” নামে। আগের বইয়ের সফলতা ধরে রেখে এই বইটিও আলোচিত এবং প্রশংসিত হয়।
বিজ্ঞান বিষয়ক লেখায় মুহম্মদ জাফর ইকবাল আশ্চর্য রকমের পারদর্শী। নিজের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের গবেষক হলেও রসায়ন থেকে প্রাণীবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ক লেখাতেও সমান সিদ্ধহস্ত। তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার ক্ষেত্রে একটি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে ফেলেছেন। নবীন লেখকেরা সেই স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে এগোয়।
পদার্থবিজ্ঞানী মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থে পদার্থবিজ্ঞান থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অবশ্য পদার্থবিজ্ঞানের রহস্যময় এবং আধুনিক ক্ষেত্রগুলো নিয়ে লিখতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তিনি নিজেই বলেছেন, “বিজ্ঞানের যে বিষয়গুলো সবচেয়ে রহস্যময় সেগুলোই সবসময় সবচেয়ে ভালো লাগে”। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের কিছু রহস্যময় বিষয় নিয়ে লিখেছেন “আরো একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থে।
রহস্যময় তরঙ্গ সলিটন নিয়ে একটি দারুণ লেখা আছে এই গ্রন্থে। পদার্থবিজ্ঞানের জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর একটি- সলিটন নিয়ে বাংলা ভাষায় এটিই সম্ভবত প্রথম জনপ্রিয় বিজ্ঞান ক্যাটাগরির রচনা। নিউট্রিনো, কিছুকাল আগেও যে কণাটি ছিলো পদার্থবিজ্ঞানের অমীমাংসিত রহস্যগুলোর একটি, তাকে নিয়েও একটি প্রবন্ধ আছে। আছে কুখ্যাত ম্যানহাটন প্রজেক্টে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরির পেছনের বিজ্ঞান নিয়ে লেখা।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়গুলোর একটি এন্টিম্যাটার তথা প্রতি পদার্থ নিয়েও একটি কৌতূহলোদ্দীপক আলোচনা রয়েছে। ইউরোপের বিখ্যাত গবেষণাগার সার্ন এ প্রতি পদার্থ নিয়ে বিলিয়ন ডলারের গবেষণা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দশক আমরা অধীর আগ্রহের সাথে সেখানকার ফলাফলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকব সৃষ্টি-জগতের সবচেয়ে রহস্যময় একটি বিষয় সম্পূর্ণরূপে জানার আশায়।
প্রাণিজগৎ, উদ্ভিতজগৎ এবং মনোবিজ্ঞান বিষয়ক লেখাগুলো “আরো একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থের সবচেয়ে পাঠ-সুখকর অংশগুলোর মধ্যে পড়ে। সাধারণ পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা কিংবা প্রযুক্তি বিষয়ক লেখাগুলো পূর্ণভাবে আত্মস্থ করতে হলে পাঠকের কিছুটা পূর্বজ্ঞান থাকা আবশ্যক। কিন্তু এই লেখাগুলো কোনো রকম পূর্বজ্ঞান কিংবা প্রস্তুতি ছাড়াই পড়ে আত্মস্থ করা সম্ভব। মুহম্মদ জাফর ইকবাল খুবই সহজভাবে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
কিছু কিছু রচনা অবশ্য পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক রচনা নয়, বলা যায় এগুলো বিজ্ঞানের তথ্য বিষয় রচনা; যেমন- ‘পশু মানব’, ‘বাঁশের ফুল’, ‘মনোবিজ্ঞানের বিখ্যাত কিছু পরীক্ষা’, ‘অন্যরকম খাওয়াদাওয়া’। এসব ছোট ছোট নিবন্ধে বিজ্ঞানের চেয়েও বেশি পরিমাণে উপস্থিত রয়েছে তথ্য। তাই বলে পড়তে খারাপ লাগবে না। আবার কিছু রচনা খাঁটি বিজ্ঞানে ভরপুর। বার্ড ফ্লু, এইডস, স্কিতজোফ্রেনিয়া, মানবদেহের ডিজাইন সমস্যা- ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলো নিয়ে অসাধারণ কয়েকটি লেখা এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
“একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থে আবহাওয়া ও পরিবেশ বিষয়ক লেখা অন্তর্ভুক্ত হয় নি; কিন্তু “আরো একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থে হয়েছে। এতে বইয়ের বৈচিত্র্য বেড়েছে। বাড়তি তাপমাত্রা পৃথিবীর জন্য অশুভ পরিণতি বয়ে আনবে বলে একটি রচনায় লেখক সতর্ক করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের চিরপরিচিত ঘূর্ণিঝড় এবং বজ্রপাত; এগুলোর পেছনের বিজ্ঞান নিয়ে দুটো চমকপ্রদ রচনা রয়েছে। বিশেষ করে, ‘বজ্রপাত’ নিবন্ধটি আলোচ্য গ্রন্থের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেখাগুলোর একটি। এগুলোর সাথে নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে একটি ছোট্ট রচনা এই অংশে যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ মুহম্মদ জাফর ইকবালের আগ্রহের তালিকায় গ্রহ-নক্ষত্র থাকবে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কয়েক বছর আগে প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তখন সেটি নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়। প্লুটোর ‘গ্রহত্ব’ নিয়ে একটি লেখা আছে। আকাশের চিরপরিচিত চাঁদ ও সূর্যকে নিয়েও দু’টি রচনা আছে। একটি অবশ্য সূর্যগ্রহণ নিয়ে। ১৯১৯ সালে যে সূর্যগ্রহণের সময় তারকার অবস্থানের আপাত পরিবর্তনের ভবিষ্যতবাণী করে মহামতি আলবার্ট আইনস্টাইন বিজ্ঞানের জগতে মহাতারকায় পরিণত হয়েছিলেন।
আগের বই “একটুখানি বিজ্ঞান”এ প্রযুক্তি, রসায়ন এবং বিজ্ঞানীদের নিয়ে কয়েকটি লেখা ছিলো, এই বইতেও আছে। “আরো একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থে আলেকজান্দ্রিয়ার শেষ জ্যোতির্বিদ ও নারী বিজ্ঞানী হাইপেশিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু যিনি বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যানের জনক, এবং বেতার প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু নিয়ে তিনি অসাধারণ প্রবন্ধ আছে। প্রতিটি রচনাই সমান অণু-প্রেরণাদায়ক।
হাইপেশিয়ার জীবন সম্পর্কে জেনে নারীরা আশ্চর্য হবেন, দেড় হাজার বছর আগে এক নারী আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে কীভাবে সমসাময়িক অন্যান্য পুরুষ বিজ্ঞানী এবং সমাজের কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে নিজেকে এমন উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে আজো তাঁর নাম বিজ্ঞানের জগতে সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয়। সত্যেন বোসের জীবন অবশ্য বাংলাদেশীদের জন্য আরো বেশি অনুপ্রেরণাদায়ক।
দেশের মাটিতে বসেই তিনি যে বিশ্বমানের গবেষণা করেছেন তাতে নোবেল কমিটি তাঁকে পুরস্কারে ভূষিত করতে পারলে বর্তে যেত। আর জগদীশ চন্দ্র বসু তো ছিলেন এক কিংবদন্তী। যতদিন বেঁচে ছিলেন, রেডিও’র আবিষ্কার হিশেবে বিশ্বে সমাদৃত হন নি। কিন্তু আজ সারা বিশ্ব জানে, এই বাঙ্গালীই রেডিওর প্রাথমিক প্রযুক্তিগুলোর সর্বপ্রথম আবিষ্কারক।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল সহজ ভাষায় নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে পছন্দ করেন। তাঁর লেখা পড়তে কখনো হোঁচট খেতে হয় না। বিজ্ঞান-বিষয়ক লেখাগুলো যেখানে সরলতা দাবি করে সেখানে তিনি অযথা বাক্যের মারপ্যাঁচ কিংবা বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে আরো জটিল করে তোলেন না- এটি তাঁর সবচেয়ে বড়ো গুণ। বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রচুর গ্রন্থ নানা সময়ে এদেশে রচিত হয়েছে, রচনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ো বড়ো অধ্যাপক এবং গবেষকরা।
কিন্তু সেগুলো পাঠক কর্তৃক সমাদৃত হয়নি, যেমনটা হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বইগুলো। উপরোক্ত গুনটিই তাঁকের অন্যান্যদের চেয়ে পৃথক করেছে। একারণে “একটুখানি বিজ্ঞান” এবং “আরো একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থ দুটো বাংলাদেশের বিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থাবলীর মধ্যে অনন্য স্থান দখল করে রাখবে ভবিষ্যতে।
- বইয়ের নামঃ একটু খানি বিজ্ঞান
- বইয়ের লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
- রিভিউ লেখকঃ Not Buying Anything from
- পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৭৫ টি।
- বইয়ের ধরনঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক pdf বই
- পিডিএফ সাইজঃ ১৩ মেগাবাইট প্রায়।
- ডাউনলোডঃ একটু খানি বিজ্ঞান pdf
#বইটি ইন্টারনেট থেকে সংগীত। #লেখকের ক্ষতি আমাদের কাম্য নয়, বইটির হার্ড কপি কেনার সমর্থ থাকলে বইটির হার্ড কপি কিনে পড়ুন।
আমাদের ব্লগে আপনার কোনো যদি পিডিএফ থাকে, আপনার অভিযোগ থাকলে আমাদের জানানোর ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিমুভ করে দিবো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ পোস্ট টি পড়ার জন্য।
Post a Comment
0 Comments